ঝরা পাতাগুলি

Tuesday, September 24, 2013

দত্তবাড়ির ছেলেটিকে


জ্বলে যাচ্ছে চোখ আর পুড়ে যাচ্ছে স্মৃতি
গুলিবিদ্ধ শব কাঁধে ছুটেছে সন্ন্যাসী
লোলুপ স্বদন্তে ঘেরা অমাবস্যা রাত
শিরায় সীসার বিষ চোঁয়াচ্ছে নিয়ত

জটামধ্যে উঁকি মারে গোক্ষুরের ফণা
চুষে নিচ্ছে বিষ যত লাল হচ্ছে মাটি
কাঁটামধ্যে ছুঁটে যাচ্ছে ঘন হচ্ছে বন
মেঘ ঢাকছে ঋষিদের ক্ষত ঢাকছে ক্ষত

গলে উঠছে শব যত পঁচে উঠছে কাঁধ
শতাব্দীর পুঁতিগন্ধে বিষাক্ত বাতাস
খসে পড়ছে মাংস তাই অস্থি ওঠে জ্বলে
পিপাসার্ত জঙ্গলে কি ক্ষুব্ধ দাবানল

জ্বলে উঠচ্ছে বৃক্ষসারী পুড়ে যাচ্ছে পাপ
অগ্নিস্নাত শুদ্ধ হল নষ্ট ধাত্রীশব
রক্ত রক্ত ভস্ম মেখে ছুটেছে সন্ন্যাসী
পরণে কৌপিন জিভে বেদন্তের বাণী।
 

"Vaada" -র extract 



সেই দুটো ঝুলে থাকা পা
বিস্রস্ত শাড়ির আঁচল
মাটি থেকে দুহাত উপরে

সেই দুটো ঠিকরে আসা চোখ
অনেকটা লম্বা হওয়া গ্রীবা
এত লম্বা উগরে আসা জিভ
টানটান পায়ের আঙুল

ক্যাসেটে সুইসাইড নোট
"আমি শুধু তোমারি ছিলাম
আর যত ভুল বোঝাবুঝি -
দেখা বা শোনার অভিশাপ"

তারপরে কঠিন শপথ
স্ব-ইচ্ছায় অন্ধ করা চোখ
সময় আর ইতিহাস ঘেটে
খুঁড়ে চলা সাড়ে তিনহাত

চোর খুনী শয়তান যে নামে ই হোক
নিষ্ঠুর ক্ষমাহীন হাতে
ওকে ওই কবরে শোয়াবো

১৫-ই আগস্ট, ২০০৪


সকাল থেকেই তার স্মৃতিপটে, ঘোলাটে চশমায়
জ্বলন্ত ঘরবাড়ি, ফতিমার নগ্ন ছিন্ন লাশ,
মশজিদ পাড়ার সেই রক্তমাখা লেন বাইলেন।

স্ট্রান্ড রোডে ভিক্ষাপ্রার্থী খোঁড়া আজিম ভাই,
সাতান্ন বছর পর আজো কিন্তু তেমনি নির্ভুল,
জাতীয় সঙ্গীত শুনে দেওয়ালে দু হাত রেখে
উঠে দাঁড়ালেন।

স্বদেশ


গভীর ঘুমের থেকে ডেকে তোলে স্নিগ্ধ নদীতীর
কাকচক্ষু দীঘিজলে আ-গোড়ালি ডুবে যায় পা
আকস্মিক স্মৃতিপটে হানা দেয় বুভুক্ষু মানুষ
গাড়ির সাইটগ্লাসে ক্রমশ পিছোতে থাকা যুবতীর মুখ।

রোজকার চেনা এই কংক্রীটে বিমনা দাঁড়ালে
পায়ের আঙুল বেয়ে জেগে ওঠে হিমে ভেজা ঘাস
নিঃশ্বাস আচ্ছন্ন করে সোঁদা মাটি শিশিরের ঘ্রান
কপাল মুছতে গিয়ে দুখানি হলুদমাখা থমকানো হাত -

চোখ জুড়ে ভেসে ওঠে কাকতাড়ুয়ার ধানক্ষেত
অজরা বৃদ্ধের সেই মৃত্যুকামী নিশ্চিন্ত বিদায়
উপযুক্ত ভবিষ্যতে অতীতের সে উত্তরাধিকার
সে অনাদি সন্ধেবেলা, মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি, অলৌকিক দীপ।

হৃৎপিন্ড খুঁড়ে চলে নৌকাভরা গ্রামের কিষাণ
খাদ্যহীন বস্ত্রহীন ঝুপড়িবাসী নিরুপায় চোখ
পঁচিশ পয়সায় কেনা মাটির গেলাস ভরা জল
টালির ইস্কুল ঘরে প্রবল ব্যক্তিত্বময়ী অঙ্কদিদিমণি।

শৈশব আকীর্ণ করা স্নেহময়ী আঁচলের টান
প্রথম বিদ্যুৎ দেখা অভিভূত বার্ধ্যক্যের হাসি
হাফপ্যান্ট বালকের অবাধ পুকুরে দাপাদাপি
রামায়ণ যাত্রাপালা, তপস্বীনী সীতার সে অনিবার্য গান।

আবীর, তুলসীপাতা, হলুদ, সিঁদুর আর ঝরা কাশফুল
ব্যাস্ততম মুহূর্তেও সমস্ত অস্তিত্ব চিরে ধুলোমাটি ডাক
অমোঘ সে আহ্বানে শিউরে ওঠে ধমনীপ্রবাহ
পারিপার্শ্ব তুচ্ছ করে কুয়োতলা ফিরে আসে প্রবাসী হৃদয়।

(শেষ দুটো লাইন এভাবে ও লেখা যেতো -

পারিপার্শ্ব তুচ্ছ করে  ফিরে আসে শাহরুখ খান
আশুতোষ এভাবেই নবীনতম সিনেমা স্বদেশ বানান।)