ঝরা পাতাগুলি

Thursday, October 03, 2013


      কিছু নস্টালজিক 

             স্বগোতোক্তি



ডানা আঁকলেই ভুরু হয়ে যায়
        সূর্য আঁকলে মনি
কারো কথা শুনে মনে পড়ে যায়
        নদীর জলস্রোত পাখির কাকলি

অনেক  পিছনে ফেলে আসা গেছে
        দিগন্তজোড়া মাঠ
মাঠে ফুটবল, মাঠে পিট্টু
মাঠে সন্ধ্যে কাটানো আড্ডা
  আর, শাঁখের আওয়াজে ঘরে ফিরে আসা শৈশব
মাঠে কাটিয়ে দেওয়া সে আহ্বান
              বান্ধবীদের
ওরা মেয়েলী,
যারা বিকেলেও পড়ে গল্পের বই রাত্তিরে শোনে "সঙ্গীত"
              (সব ক্লাসিক্যাল)
ওরা সাঁতার কাটতে জানে না
         শুধু হোমটাস্ক
ওরা কলেজে গেলেও ঘর থেকে নিয়ে
         যবেই টিফিন বাক্স
ওরা খোরাক করতে পারে না
         জুনিয়ারদের
আর ফ্রকের ঝুলের সঙ্গে
ওরা মেয়েদের বুক মাপে না
         ঝারি মারে না

আমরাই একা ফুচকা খাওয়ার দঙ্গল
         দেখে হ্যাটা দিই
মেলা কর্নারে তালপাতা-ঠোঙা চাটলেও
         মুখে মানি না। পড়া বুঝতে
আমাদের চিলেকোঠাতেও
   তবু কখনো
          আসে পাশের বাড়ির কন্যে, (চোখে বিদ্যুৎ !)
   পড়া হয়,
যার কিছুই হয়তো পাঠ্য বইয়ের পড়া নয়
             সিলেবাসে নেই
  শুধু কৈশোর তাকে করতে শিখেছে অনুভব
      সেই সির্‌সির্‌ কেঁপে ওঠা-দের
বাইরে যতই প্রখর প্রতাপ নিদাঘের
           ঘরে হেমন্ত ছুঁয়ে যায় আমাদের পেন্সিল
বইখাতারাও ফ্রিতে ডানা পায়
উড়ে পেতে চায় সেই প্রান্তর
দিন শেষ হলে যার কাছে ফিরে আসবেই
        সেই পাঁচজন -
        আর নেমকহারাম সময়টা হাতে তুলে দেয় -
                   দুটো বাংলা -

তখনও কি স্রোত বইছে বড়বড়িয়ায়
        খ্যকশেয়ালের প্রিয় ঝোপঝাড় -
                   সব এড়িয়ে
সোজা নদীর ঘাটে অশথতলাতে বসেছি
        নস্টালজিক ......
       ............. প্রায় দশ বছরের ব্যবধান ...........
বান্ধবীরাও ঘর পাল্টেছে স্বচ্ছন্দেই
  তবু স্মৃতি থাক -
         সেই সুবোধ গোপাল স্মৃতিরাও -
হাত কেটে যাওয়া দেখে কান্না
       (ফুলে বিশ্রামরত মৌমাছিটাও হতবাক! )
       - "এতো মায়ের কোলের তুতুমুতু"
যেই জলভরা চোখ বলল -
             ""মা তো ....  মরে গেছে  .... ""
                        - সেই স্তব্ধতা আজো হাতরায়....
চিলছাত ছুঁয়ে ফেটে ঝরে সেই আর্তি
       আমার আকাশ খান্‌খান্‌ হয়ে ভেঙে যায়
কালো গোমরানো দিন চিৎকার করে, হুঙ্কার ছোঁড়ে রাতদিন -
   ঘিরে ধরতে আসছে সম্পর্কের কঙ্কাল
        ছেড়ে যাও, চলে যেতে দাও -
            যত বলছি -
আরো আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধছে মৃত শৈশব

হাতে তুলি নিলে রং কম পড়ে
          ডানা আঁকলেই ভুরু হয়ে যায় - চোখ অন্ধ ।


      রক্ত কিংবা কবিতা বিষয়ক .


সব রক্ত মেঘ থেকে ঝরে পড়ে গোধূলীর রঙে .....

যেসব রক্তের বিন্দু পেশী চুঁয়ে ঘাম হয়ে
     কাঠফাটা রোদেলা সিঁড়িতে রেখে পা
এদেশের প্রতি জনপদে
     মানুষের নুন-দেনা শোধ করে ফিরে গেছে জলজন্মে তারা প্রত্যেকে
                    কোনো কোনো দিন
মেঘ থেকে পুনর্বার ঝরে পড়ে গোধূলীর রঙে।

আর যে যে রক্তবিন্দু আতপ্ত সীসায় কিংবা ধারালো ইস্পাতে
শিরা বা ধমনী ছিঁড়ে তাৎক্ষণিক অকস্মাৎ
               নদীজন্মে মাটি চেটে চেটে
ধরিত্রীর স্তনগর্ভে ফিরে গেছে তারাও সকলে
        নতুন ধানের বুকে দুধ হয়ে ফিরে আসে নবান্নের মাসে
  তারাও সমস্ত নুন সমুদ্রকে ফেরত দিয়েছে।

     শুধু যারা জিভের কৃপায়
বিষাক্ত ছোবলে নীল, চোখ থেকে টুপ্‌ করে খসে পড়ে মাঝরাতে
     অক্ষরের অবয়বে শব্দের দীর্ঘ করতলে
তারাই কবিতা হয়, কারো দৃষ্টিপাতে
      জ্বলে ওঠে ধোঁয়াজন্ম নেয়
পোড়া দাগে বেঁচে থাকে সমস্ত জীবন,
কারো চোখে আরেকবার লবণাক্ত ঋণ হয়ে গলতে থাকে আকন্যাকুমারী ....


সবুজ-হলুদ-লাল


দু-পা এক-পা এগিয়েছি আর বদলে গেল আলো
গোটা রাস্তা ছুটে এল দু-চাকা চার-চাকায়
শব্দে আলোয় ঝাঁপিয়ে পড়ল হঠাৎ করে পুরোটা কলকাতা
বেঁচে থাকায়, একাকীত্বে, সমূহ সংকটে .....

দুপাশ দিয়ে হাওয়ার শব্দে ছুটে যাচ্ছে গতি
পায়ের তলায় সুতোর মত দড়ি
কেঁপে উঠছে চলকে দিয়ে যেটুকু সম্ভব,
আস্তে দুচোখ বুজিয়ে ফেলে আরেক পা বাড়ালাম ......

দেজা ভু 





ঠিক এভাবে পেরিয়ে চৌকাঠ
কেউ হঠাৎ "আসছি" বলে ছিল
পেয়ালা বেয়ে চল্‌কেছিল চা
        ......     চোখে তাকানো চোখ

ডিঙিয়ে অনেক উঠোন
আজ এখন বারান্দাময়
মেঘ মেখে দাঁড়িয়ে আছি
দৃষ্টিতে অলীক বিকেল

ঝরা পাতা উড়ে যাচ্ছিল
নিসঙ্গ হাঁটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
সুতির চাদরে ওম রেখে
আজানে গোধূলি পুড়ে ছাই

গীটারে বেজেছেন অশীতিপর
বৃদ্ধ বিদেশী গায়ক
স্যাক্সোফোনে ড্রামে ব্লুজের রং
অন্ধকার গেয়ে ওঠে

সে ছিল অনেকটা এমনই রাত
বাতাসে হিমভেজা ঘ্রাণ
সুর উড়ে যাচ্ছে সপ্তকে
ডোভার লেনে শীতকাঁটা

হেমন্ত যায়নি তখনো
কান ছোঁয় সাইরেন ধ্বনি
দলছুট একলা দু-পায়ে
উড়ে এল সেই ঝরা পাতা

দুচোখে ভোরের পাহাড়
আলগোছে মাখতে এসে
দেখা হয়, জড়িয়ে ধরে
আচমকা সেই চেনা মেঘ

কখন সেও দুহাতে দুটো ব্যাগ
পিছনে রেখে ভেজা বছরগুলো
"আসছি" বলে তাকালো, চোখে চোখ
        ......     কেঁপে উঠল স্মৃতি ....