আমাকে চমকাও
এ এক্কেবারে নতুন জিনিস হয়তো নয়, একটু তবু নতুনই বটে। অন্তত: আজ থেকে তিরিশ বছর আগে এরকমটা কেউ ভাবেনি। বা হয়তো ভেবেছে, জানতে পারেনি কেউ, ফলে বাজারে বিক্রি হয়নি, ইয়েস, যেটা নিয়ে আজ কথা বলতে চলেছি - মশা মারার র্যাকেট। দেখেছেন নিশ্চয়ই। আলবাৎ দেখেছেন। ব্যাডমিন্টন র্যাকেটের মতন দেখতে, শুধু একটা নাইলন স্ট্রিং লেয়ারের বদলে তিনটে মেটাল তারের লেয়ার থাকে। চার্জ দিয়ে রাখতে হয়। তারপর প্লাগ থেকে খুলে সুইচ অন করে, মশাকে ফেদার কর্ক ভেবে লাগাও ব্যাকহ্যাণ্ড ফোরহ্যাণ্ড স্ট্রোক। মশার বডি, মেটাল তার স্পর্শ করলেই স্পার্ক। প্রথমে পিট্পিট্ করে, তারপর তারে আটকে যাওয়া মশাটার থেকে - একটু কাছ থেকে দেখলে ভালো বোঝা যায় - খানিক ধোঁয়া বেরোয়। তারপর ফট্ করে জোরে আওয়াজ হয়, আলোসহ। এই সময় পোড়া গন্ধটা পাওয়া যায় মশাটার থেকে। সারা ঘরে গন্ধ হয়ে যায়। আড়াই হাজার ভোল্ট কারেন্ট মশাটার গায়ে ঢুকে গেছে, তাই, মশাটা মারা যায়। অবভিয়াসলি, এবং সন্দেহাতীত ভাবে। খানিকক্ষণ এই রকম ভাবে মশা মারতে থাকলে র্যাকেটের গায়ে লেগে থাকতে দেখা যায় অনেকগুলো মশার আধপোড়া দেহ। তখন র্যাকেটটা ঝেড়ে ফেলতে হয়, নতুবা দেখতে খারাপ লাগে। অ্যাস্থেটিক্স। নতুবা কেমন লাগত মশার শবদেহ ভর্তি র্যাকেট নিয়ে আরো আরো মশার দিকে ছুটে যাওয়া? গা গুলোতো? খুনী খুনী লাগত নিজেকে? হা:।
আমি আর আমার ক্লাস ফোরের বোন সন্ধ্যে হলেই মশা মারতে নেমে পড়ি। তখন পাশের বাড়ির বনিও। বনি ক্লাস ফাইভ। ফার্স্ট হয়। পাশাপাশি দুই বাড়িতে শুধু চট্ পট্ ফট্ ফট্ মশার মৃত্যুধ্বনি ও শিশু-কলরব, হর্ষধ্বনি। যখন কিনছিলাম, দোকানি তখনই বলেছিল - "মরবে, মরবে। ফট্ ফট্ করে ফাটবে মশাগুলো, দেখতেই পাবেন।' তবে, দুটো পা দুদিকের তারে আটকে আড়াই হাজার ভোল্টে কালো হতে হতে একটা মশার অঙ্গার হয়ে যাওয়া আমি একদৃষ্টে দেখেছি। তার পুড়তে থাকা দেহের থেকে বেরোনো পোড়া গন্ধ আমার ঘর ভরে ছিল, লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ার মুহুর্ত থেকে ঘুম এসে যাওয়া পর্যন্ত গন্ধটা আমার ঘিরে ছিল। দিদিমা মারা যাওয়ার পরে শৈশবে একবার মাত্র শ্মশানে গিয়েছিলাম। পোড়া শবদেহ ঘ্রানস্মৃতি আমার চেতনে নেই, এ সময়ের থাকা উচিত। আছে কিনা নিশ্চিত নই।
মশাদের বাসাংসি জীর্ণানীর জন্যে এ এক ইলেকট্রিক চুল্লী, যার দরজা খোলা, আর যার প্রবেশমূল্য মনুষ্যোচিত ডেথ সার্টিফিকেট নয়, ওড়ার স্বাধীনতা। তবে আরো একটা ঘটনা আমায় দেখতে হয়েছে। স্তম্ভিত হয়েছি। যে সব মশাকে তারের জালে আটকানো যায়নি, প্রবল ইলেকট্রিক শক খেয়ে যারা ছিটকে পড়েছে মাটিতে, ভেবেছি মরে গেছে, র্যাকেটের গায়ে পুড়তে থাকা দেহাবশেষ ঝেড়ে ফেলার পরে যাদেরকে আর আলাদা করে বোঝা সম্ভব ছিল না মৃতদেহ থেকে, তারা খানিক পরে জ্ঞান ফিরে পেয়ে ছটফট করতে থেকেছে, গোল হয়ে তীব্রবেগে ঘুরতে থেকেছে মাটির উপরে। যন্ত্রণায়? ওরা কি আর্তনাদ করে? দেখতে থাকি, দেখতে থাকি। একসময় তারা উড়ে যায়। আর মশা মারতে মারতে, পোড়া গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে কিছু লহমা পরে আমি আবিষ্কার করি অনবরত বোঁ বোঁ শব্দ। চারপাশে অবাক তাকিয়ে - অদ্ভুত! শয়ে শয়ে মশা! ভয় পেয়েছি, কারণ একটা মাত্র র্যাকেট দিয়ে ওদের সামলানো যাচ্ছিল না। র্যাকেটের চার্জ কমে এসেছিল কিংবা ওরা মরছিল না কিংবা দুটো মরছিল আর ওরা দশটা আসছিল, যাই হোক, আমি ভয় পেয়েছিলাম। মশারীর ভিতরে ঢুকে পড়েছিলাম, আর বাইরে অনেকক্ষণ বোঁ বোঁ শব্দ শুনেছিলাম লাইট নিভিয়ে দেওয়ার পরেও, আর তখনো ঘরে মশাপোড়া গন্ধ, তীব্র।
যাঁরা ভাবছেন আমি কোনো প্রান্তিক অপ্রয়োজনীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি ক্ষমতাশীর্ষ বর্গের শেষ বিধান ও তার বিপ্রতীপে গণ-অভ্যুত্থানের রূপকথা লিখতে চাইছি, তাদেরকে চুক্কি দিতে এবার আমরা বাজারের দিকে এগোবো, যেখান থেকে আমি মুরগি কিনি। এখানে, বারাসতে, মুরগি কাটার আগে ঘাড়ে একটা লুকোনো মোচড় দিয়ে ওটাকে একটা লম্বা প্লাস্টিকের ড্রামে ফেলে রাখা হয়, যতক্ষণ না ওর ছট্ফটানি বন্ধ হচ্ছে। তারপরে ছালটা, পালকসহ, ছাড়িয়ে নেওয়া হয়, যেমন ফল থেকে খোসা। ওর সমস্ত হ্যাঁচোর-প্যাঁচোর, মৃত্যুমুহুর্তের আকুলিবিকুলি চোখের আড়ালে থাকে। শুধু শব্দটা শোনা যায়, খবরের কাগজে হেডলাইন পড়ার মত। অ্যাস্থেটিকস। বরোদায় ফতেগঞ্জ থেকে কিনতাম। ছেলেটা বিড়বিড় করে কিছু বলে ছুরিটা দিয়ে মুরগিটার গলা চিরে দিয়ে ওটাকে দু-পায়ের নিচে চেপে রাখত। গলা থেকে বেরোনো রক্ত গড়িয়ে যেত ওর পায়ের সামনে দিয়ে। এইভাবে একবার একটা মুরগির পায়ের হাড় ভেঙে গেছিল। টুঁটি ছিঁড়ে যাবার পরে তার আর্ত পা ছোঁড়াছুড়ি, ছেলেটার পায়ের নিচে পিষে যেতে যেতে হাড়টা ভেঙে দিয়ে গেছিলো। লেগপীসটা কাটার পরে দেখা গেছিল রক্ত বেরোচ্ছে মাংসের নীচে থেকে। আমার দাবি এভাবেই মুরগি কাটা উচিত। চোখের সামনে। বাড়িতে এনে রাঁধার আগে, স্যালাড সাজিয়ে খাওয়ার আগে জানা উচিত যাকে খাচ্ছি, তার শেষ সময়টাও। বোনকে নিয়ে এবার থেকে বাজারে যাব। ছোট্ট থেকে ও দেখতে পাবে কিভাবে মরে যেতে হয়। কাৎরাতে থাকা, ছটফট করতে থাকা মুরগিটাকে দেখতে ওরও ভালো লাগবে নিশচয়ই। পুড়তে থাকা মশাগুলোর দিকে তো একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে দেখি। লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিন চলে আসে উৎসাহে - "মশা মারব মশা মারব' করে। খুব এনজয় করবে। তারপর পাঁঠার দোকানে। দেখেছেন কিভাবে ওদের কাটা হয়? আমি একবার বলি দেখেছিলাম। এক কোপে মুন্ডুটা নামিয়ে দেওয়ার পরে পিচকিরির মত রক্তস্রোত, আর কবন্ধ দেহটা লাফাচ্ছিল উঠোনে। ফ্যাসিনেটিং মাইরি। গোরু কাটা দেখেছেন? মানুষ? মানুষ মারলে কিরকম দেখায়? গণপিটুনি দেখেন নি? এ সময়-এর তো তবু কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে। আমরা শুধু টিভি আর খবরের কাগজ। পেটে ভোজালি ঢুকিয়ে কিভাবে উপরে এনে বাঁকিয়ে দিতে হয়, যাকে বলে "এল্' আর নাড়ি ভুঁড়ি বেরিয়ে আসে, কিভাবে সাঁড়াশি দিয়ে নখ উপড়ে ফেলতে হয়, চোখের ঠিক মনিতে ঢুকিয়ে দিতে হয় সরু করে কাটা পেনসিল, ব্লেড দিয়ে সূক্ষ্ম চিরে ফেলতে হয় মুখের চামড়া যাতে মাংসের নিচে থেকে হাড় বেরিয়ে আসে, তীব্র লাথি মারতে হয় বা একটা ভারি ডাণ্ডা দুহাতে তুলে নামিয়ে আনতে হয় জোরে দুই উরুর মাঝখানে - আমরা তো দেখিনি, আমরা তো জানিনা, অনুভব করিনা, আমরা শুধু খবরের কাগজ আর টিভি চ্যানেল, কখনো কখনো খুব ডিপ্রেসিং খবর এলে যাতে পাতা উল্টে দেওয়া যায় বা চ্যানেল পাল্টানো যায় - মিরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার - ২। এবার আসছেন আমোদপুর বীরভুম থেকে অতনু বর্মণ - ক্ল্যপ ক্ল্যাপ ক্ল্যাপ।।
তাহলে লেখাটাকে অবশেষে এদিকে এনে ফেলা গেল, নাকি ও নিজেই আসতে চাইছিল এদিকে! ভায়োলেন্স। প্রতিমুহূর্তের নির্মম ভায়োলেন্স, নিষ্করুণ, অ্যাস্থেটিক্সে যার বিন্দুমাত্র ঝোঁক নেই। আর এ জিনিসটা পাতি মিশে আছে আমাদের প্রতিদিনকার যাপনে। ট্রাকের তলায় চাপা পড়া কুকুরটা রাস্তার ঠিক মাঝখানে তার বেরিয়ে আসা অনেকখানি অন্ত্র ছড়িয়ে, দুখানি দেহাংশের মধ্যে এক বিঘৎ কালো টায়ারছাপ পীচরাস্তা ব্যবধান নিয়ে শুয়ে থাকে, ছাদে মরে যাওয়া শালিখটার চোখ খুঁটে খেয়ে যায় লাল পিঁপড়ের লাইন, সদ্য জন্মানো বেড়ালছানা দুটোকে খেয়ে উঠোনে কিছুটা রক্তের দাগ রেখে চলে যায় হুলোটা। পাড়ার মাংসের দোকানে রোজ চোখের সামনে কাটা হয় ছাগল, মুরগি আর, প্রদর্শণী যেন, ঝুলতে থাকে তাদের ছাল ছাড়ানো দেহ। রাজাবাজারে অবশ্য গোরু ঝুলালে আপত্তি। মরে যাওয়া জীবটার সাইজের উপর নির্ভর করে আমাদের রিয়্যাকশন - অ্যাস্থেটিক্স? আমরা এখন অনেক সীজনড। সিনেমায় দেখছি পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে কপালে গুলি, মাথায় পুঁতে দেওয়া বড় লোহার পেরেক হাতুড়ির ঘায়ে, উল্টে যাওয়া স-আরোহী গাড়িটার জ্বলে ওঠা বিস্ফোরণে। আমাদের বিনোদনে ঢুকে অছে এই ভায়োলেন্স, হিট সিনেমায়, স্পোর্টস চ্যানেলে, রেসলিং শো-এ, নিউজ চ্যানেল -খবরের কাগজে। বোমায় ছিন্ন ভিন্ন দেহের ছবি দেখছি, গুলি লাগা শরীর, ব্যাণ্ডেজ বাঁধা হয়নি তখনো, রক্তে ভেজা। ছবি দেখছি শব্দে গাঁথা দু-কলম তিন-কলমের খবরে - চার বছরের মেয়ে ধর্ষণ, পাঁচ বছর, দশ বছর, পঁচিশ, পয়তাল্লিশ, পঁয়ষট্টি - গণধর্ষণ, পাশের বাড়ির দাদা, কাকা, নিজের বাবা,পুলিশ, পার্টি ক্যাডার। খুন একা বাড়িতে, ফ্ল্যাটে, সন্তানকে, বাবা-মাকে, শাশুড়ি, গৃহবধুকে বালিশে মুখ গুঁজে, গ্যাস জ্বালিয়ে, কেরোসিনে পুড়িয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে, পুঁতে ফেলে'। আমরা সীজনড। ভায়োলেন্স আমাদের আর এফেক্ট করে না, যতক্ষণ চেনা ইমেজারি ছাড়িয়ে না এগিয়ে যাচ্ছে সে। আমরা নড়ে বসি তখনই, যখন মেরে ফেলার পরে ধর্ষন করা হয় মেয়েটির মৃতদেহকে। বাচ্চা ছেলেমেয়েদের যৌন নির্যাতনের পর তাদের দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খেয়ে ফেলে কেউ, সেপটিক ট্যাঙ্কে মুখ গুজরে বৃদ্ধা মেরে ফেলে শিশুটিকে, ড্রেনে কুয়োতলায় খোঁজ পাওয়া যায় চুড়ো হয়ে ওঠা কঙ্কালস্তুপ। ভায়োলেন্স অতিক্রম করে যায় সাধারণত্ব। সংখ্যার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। পাঁচশো লোককে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যদি গুরুত্ব না পায়, তাই সংখ্যা বেড়ে যায় আড়াই হাজার-এ। চোদ্দ-আঠারো নয় খুন ও মৃত্যুর কাউন্ট বাড়িয়ে নিয়ে যেতে হয় তিনশো -চারশো আটশো-য়। তিন-চারটে ধর্ষন মিডিয়ায় আসতে আসতে ফুলে ওঠে একশো-দুশোয়। শিশুদের মরে যাওয়াটাই আর যথেষ্ট থাকে না, তাদের মৃতদেহ সিমেন্ট বাঁধানো রাস্তার নিচে নিয়ে ফেলতে হয়। পার্টি ক্যাডার আর পুলিশের গুলিতে ক'টা গ্রামবাসীরা মরে গিয়ে কিসুই হেলদোল মচাতে পারে না, তাদের ট্রাকে বোঝাই হয়ে অন্যত্র চালান হতে হয়, নদী সমুদ্রে বয়ে হাঙর কামট বোঝাই করে ফেলতে হয়, চালানপথে লাশের ঢিবি উপছে পথে গড়িয়ে পড়ে যেতে হয় তাদের কাউকে কাউকে। হাসপাতালের ডাক্তারদের রাজনৈতিক রঙনির্ভর রোগীদের প্রতি দুর্ব্যবহার যথেষ্ট থাকে না, ক্ষতস্থানে অত্যাচার, মিথ্যে এক্স-রে ও ডায়গনিসিস - ভায়োলেন্স বাড়তে থাকে। আমরা সীজনড।, আমাদের নাড়াতে, আমাদের চোখে দুফোঁটা জল আনতে, আমাদের মুখ থেকে ঘৃণা, বিস্ময়, ধিক্কার বের করে আনতে বাস্তবকে, ছায়াবাস্তবকে, মিডিয়াকে রাজনীতিকে, সমবেদনাকে অনেক খাটতে হচ্ছে। কি আর করা যাবে। এখন তো, যেমন বললাম, এমনকি মশা মারার র্যাকেটও বেরিয়ে গেছে বাজারে। আড়াই হাজার ভোল্ট শরীরে বয়ে প্রাণীগুলোর দেহ ক্রমশ অঙ্গার হয়ে যাওয়া আমরা অবলীলায়, নির্বিকারে দেখছি। কোন দূর গ্রামে কিভাবে মানুষ মরেছে জেনে চেগে গিয়ে গণধিক্কারপত্রে সইসাবুদ করে দেব এতই সহজে? এসো রাজনীতি, এস গণমাধ্যম, এস গুজব, ভায়োলেন্সের ডোজ বাড়াও, প্লীজ, আমাকে চমকাও!!
==========================================================
পাঠপ্রবেশকঃ ১লা মে, ২০০৭ তারিখে গুরুচন্ডা৯-র কূটকচা৯ বিভাগে প্রকাশিত। কলামের জন্যে এই লেখা ফরমায়েশি হলেও এটা আমার নিজের ইচ্ছেয় মন থেকে লেখা।
বিষয় নিয়ে বলার কিছুই নেই। এই লেখার দেড়মাস আগে ১৪ই মার্চ নন্দীগ্রাম হয়ে গেছে। সরকারী ও বিরোধী মিডিয়া ভায়োলেন্স ও মৃত্যুসংখ্যা নিয়ে জাগলিং চালাচ্ছে। আমি একটা মশা মারার র্যাকেট কিনেছি এবং দিন-প্রতিদিনের মিডিয়াপ্রদর্শিত ভায়োলেন্সডোজ বৃদ্ধিতে আর আমাদের, সাধারণ মানুষের বিস্ময়ক্ষোভহীনতা� � অসহিষ্ণুতর হয়ে উঠছি। এই লেখা আমার রক্তক্ষরণ।
একটা ভালো ক্রিটিক পেয়েছিলাম, পূর্ণ সহমত না হলেও এখানেই রাখলাম।
"পুরো লেখাটার সারমর্ম হল এই বাক্য- " আমাদের নাড়াতে, আমাদের চোখে দুফোঁটা জল আনতে, আমাদের মুখ থেকে ঘৃণা, বিস্ময়, ধিক্কার বের করে আনতে বাস্তবকে, ছায়াবাস্তবকে, মিডিয়াকে, রাজনীতিকে, সমবেদনাকে অনেক খাটতে হচ্ছে।"
ইতিহাস দেখে মনে হয় এখন তাও কিছু আশা আছে আমরা ভায়োলেন্স দেখে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হব, একসময় তাও ছিল না। মানুষের মৃত্যু ছিল পাবলিক স্পেক্টাক্ল। এখনও কিছু দেশে প্রাণদন্ড হল একটি পাবলিক স্পেক্টাক্ল্। "বেঁচে থাকার অধিকার মানুষের অচ্ছেদ্য অধিকার"- এই দাবী একটি অতিনবীন ঘটনা। বিপক্ষে থাকলে খুন করতে হবে- এই আচরণের অবশ্যম্ভাবিতা নিয়ে এই শতাব্দীর আগে কোনো মানুষ কোনো প্রশ্নই তোলেন নি। সেখানে মশা মাছি পাঁঠা মারা তো তুশ্চু। অহিংসার গল্প মূলত: বিংশ শতাব্দীর গল্প। অশোকের মত ব্যতিক্রম আছেন। কিন্তু সেখানেও মনে হয় ভায়োলেন্স নিয়ে ধারণার কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয় নি। অন্তত: অশোকোত্তর ভারতীয় ইতিহাস সেই সাক্ষ্য বহন করে। বাংলাদেশের উনিশ শতকের ইতিহাস পড়লে বোঝা যায় যে সেদিনও বৃহত্তর সমাজ ভায়োলেন্সে আচ্ছন্ন। সতীদাহ, গঙ্গাযাত্রা, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জনের মত সহিংস আচার ছিল মামুলি ঘটনামাত্র, এবং বিশেষ ক্ষেত্রে পাবলিক স্পেক্টাক্ল। কিছু ক্রান্তদর্শী এলিট এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলে বৃহত্তর বঙ্গসমাজ এই ব্যাপারে নিস্পৃহই ছিল। আমাদের হিন্দু ধর্মীয় অভ্যাসে ও দর্শনে ভায়োলেন্সের একটা বড় ভূমিকা ছিল। সেই আলোচনা একটা পৃথক পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধের দাবী রাখে। বিংশ শতাব্দীতে ভায়োলেন্স নিয়ে মানুষের ভাবনার মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে এবং এই ভাবনা শুধু এলিটসমাজের কুক্ষিগত নয়। সাধারণ সমাজও এখন ভায়োলেন্স নিয়ে অনেক বেশি অসহিষ্ণু। সেই কারণেই ভায়োলেন্স এখন মিডিয়াতে উল্লেখযোগ্য খবর হয়ে ওঠে। ভায়োলেন্স এখন সহজে মেনে নেওয়ার জিনিষ নয়, এবং সেইজন্যই ভায়োলেন্স একটি খবর। এবং সেইজন্যই লেখক "আমরা এবং আমাদের চারদিকের ভায়োলেন্স" নিয়ে কূটকচালি লেখে।"
No comments:
Post a Comment