ঝরা পাতাগুলি

Thursday, July 11, 2013

চিংগারি এবং মিঠুন

বলার বেশি কিসু নাই। কল্পনা লাজমী একটি নাটক বানায়েছেন - স্টেজ ভাড়া করা আর মহড়া প্রদর্শণী ইত্যাকার স্বল্পস্থায়ী নশ্বর ঝামেলায় না গিয়ে ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন - লে:, নাচ। চিত্রনাট্য লিখিয়ে ভদ্রলোক নেহাৎ কবি, অন্তত তাঁর মনে এই বুজকুড়ি অবিরাম উদ্বেল - আমি কবি যত বেশ্যার আর পিওনের আর পুরোহিত গোদা-লেঠেলের। ক্বচিৎ আগেও সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন, নাটক বা কবিতা ছাড়া, জানতে পারলে মাক্কালীর কিরা ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক লেগে যাবে। সিকি ল-অ-অ-অ-অ-ম্বা ডায়লগ রে কাকু! বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে, রেগে যাচ্ছে, কেঁদে যাচ্ছে, ফুলে-ঝুলে-তুলতুলে তবু দাঁড়ি নাই, সব আছে, শুধু থামা নাই - নদী আপনবেগে পাগলপারা। আর গাঁত? পাগোল !! সিনেমা দেখতে বসে তো আর ব্যাকস্টেজ প্রম্পট কানে যাবে না, হৃদ্কমল উন্মুখর করে শুধু ভাবি, এই গাঁত কুলুঙ্গীতে থাকিলে জননী, লুঙ্গীতে কি চোতা বেঁধে হলে ঢুকিতাম! এতো আর ড্রয়িংরুম নয় রে দাদা , যে দুটো বিড়ি কি এক গেলাস বিয়ার খেয়ে এলুম ফ্রিজ খুলে! কেৎরে পড়ে থাকো, ১০০ টাকার টিকিট! হুঁ হুঁ বাবা আঁতলামো কব্বে তার খচ্চা নাই?
সেট ফেট দারুণ সোজা - একটা মন্দির গোছের দুর্গবাড়ি, একটা বেশ্যাবাড়ি, ডাকখানা, পাহাড়কোলের মাঠ একখান, আর গেরাম-মেলা। খতম। বাকিটা তো আলো ক্যমেরার লে ছুট ছুট খেলা।

কে যেন - ন্যারেটিভ কারে কয় - কুইজ কনটেস্ট বুকে চেপে বদহজমের চোঁয়া ঢেকুর তুলছিল? হলে গিয়ে বা না গিয়ে দেখে নাও গুরু। জলবৎ ব্যাপার। গুজু লোকজনের এহেন জিজ্ঞাসা নাই। হলে তাই আমায় গুনে দশটা টোটাল পাব্লিক ছিল, তার মধ্যে তিন জোড়া দেওয়াল ঘেঁষে বসছিল বলে আদৌ সিনেমা দেখতে এয়েছিল কিনা সাক্ষ্য দিলুম না।

মহাভারত টিভি সিরিয়ালের ধাঁচে নিরলম্ব বায়ুভূত ভয়েস গপ্পো বলা শুরু ও শেষ করে, যখন ক্যামেরা ঘুরছে ফাঁকা গ্রামের সেটটায়, তখনো শ্যুটিং শুরুর লোকজন ভিড় করে নাই। এমনকি মাঝখানে লেখক - ডায়ালগ লিখছি না গপ্পো - ভুলে "বসন্তি জিজ্ঞাসা করিল - এ কার চিঠি, ডাকপিওন কহিল -তোমার" গোছের বন্ননা লিখে ফ্যালায়াছিল, কল্পনা-দি ওটারেও -আহা কি কাব্যিক বন্ননা" বলে নিরলম্ব ভয়েসকে দিয়ে কমেন্ট্রি করিয়ে দিলেন। আর স্ক্রীণে চলছে সেই গোমরা গলার করা কমেন্ট্রির অভিনয়। কারণ সোজা নয়, একটু পরেই একটা চিঠি পড়া হবে যেটা কিনা আদতে কবিতা। তব্বে? এমন সময় কেউ লেখকের ওপোর ডিকটেট করে? যদি দাবি ওঠে কল্পনা-দি কাব্যি বোঝেননা বলে সব গুলে দিলেন, ঐ জায়গাটা খিল্লি ডায়লগ দিলে সাহিত্যটুকু টোস্টারে সেঁকা পাউরুটি হেন ভাজা ভাজা হয়ে যাইতো?

গপ্পো বলার কিছুই নাই, ভিলেন মিঠুন পুরোহিত, নায়িকা সুস্মিতা বেশ্যা, নায়ক ছোকরা ডাকপিয়ন, সাপোর্টিং অ্যাক্টো তে ইলা অরুণ লালবাতি-পাড়ার মাসি, ব্যাস। ফিলিম ফেয়ারে নমিনেশনে অবিশ্যি নায়কের নামটাও থাকবে না। আর গপ্পো বলার কি রইল? যে অন্তত দুটো হিন্দি ফিলিম ও দেখেছে সেই বলে দেবে - ট্র্যাঙ্গেল টা কেমন হবে, আর শেষে হিরো খুন হবে বলে হিরোইন ত্রিশুল হাঁকড়ে ভিলেন হত্যা করবে। তাইলে, মজাটা কোথায়?

ইলা অরুণের প্রবল খোরাক হওয়ার প্রবণতা ছাড়াও মজা কিছু আছে, অন্তত তিন ঘন্টার জায়গায় নাচগান সমেত মেদবাহুল্য ঝেড়ে ফেলে দেড় ঘন্টায় বাঁধলে এমনকি মজার জায়গায় হুলাবিলা নৃত্য থাকতো বলেই মনে হয়, যখন আদেশ শ্রীবাস্তব চন্দ্রবিন্দুর ভূত বসেছে থেকে "ওলাই ওঁ কুং কুং জামোরাম্বো" মিউজিকটুকু কুল ঝেড়েই মেলার গানে জুড়ে দিলেন ("ডঙ্ক মারে" -গানটা)। (ওখানা চন্দ্রবিন্দুও কোথাও থেকে না ঝেড়ে থাকলে অবিলম্বে স্যু (আমীরের মেম নয়) করুক, হিন্দিওয়ালারা নচির টুকেও গান বানাচ্ছে, বাংলা থেকে এই ডাকাইতি সহ্য করার অর্থ, হে কমরেড, স্বীয় ধন সম্পদ কৃতিত্বের অবিলম্বে মুম্বাই তরীপার। নিজেরে বাঁচাও) । তাছাড়া বাকি উচ্চকিত যাত্রা ব্যাপারটাও মজার তবে এ সি হলে ফেব্রুয়ারি মাসে ১০০ টাকা খচ্চা করার পক্ষে যথেষ্ট নয়। যাত্রা লিখেই মনে পড়ল - আগে বোধহয় কোথাও নাটকও লিখেছি - কোনোটাই পুরো ভুল নয় বলে - ""নাত্রা"" বলে চালাই এখন থেকে।

মজা-১ : খোরাক - ইলা অরুণ ।। প্রবল রঙচঙে মুখ, ঠোঁট ও বিলীয়মান ভুরু নিয়েও মহিলা ক্লোজআপ দিতে ঘাবড়ান না। সংলাপ মুখস্ত বলেন -হাসেন, কাঁদেন, অবাক হন, মোটামুটি সব রকমের ভার্সেটাইল এক্সপ্রেশনের নমুনাই রাখেন, আমরা দেখি মহিলা প্রবল অ্যাকটিং কচ্চেন। শুদ্ধু কোনো কমিউনিকেশন হয় না। একটি, ন্যূনতম একটি ভাবও তার পর্দা পেড়িয়ে এসে কোত্থাও বেঁধে না। পোষ্কার বোঝা যায় মহিলা অ্যাক্টো কচ্চেন। জাঁদরেল ""নাত্রা""ভিনেত্রী হবেনইবা।

মজা-২ : সুস্মিতা সেন : ইল্লুস্ !! না হে। নাভি, কাঁধ আর বিভাজিকা (যা কিনা কখনো কখনো সুরঙ্গবৎ ব্ল্যাকহোলরূপ প্রতীত) ছাড়া কিছু দেখার আশা করে গেলে এই আমি আগেই আব্বুলিশ দিয়ে রাখলাম, পরে বলে কোনো লাভ নাই। মেয়েটাকে বিলা বাড় খাওয়ানো হয়েছে - জম্মের মতো অ্যাক্টো করে নাও বলে, খেয়েও গেছে - ফাটিয়ে অভিনয় করেছে - সমস্ত অভিনয়টা - পুরো অভিনয় বলে সবসময় বোঝাও যাচ্ছে না, আর কি চাই? মুখের প্রতি বর্গমিলিমিটার কে কুঁচকে ফেলার ক্ষমতা রাখেন বলে বাহবা পাবেন, কারণ ইলা অরুণ, পাশে, মেকাপের ট্যানিঙের জন্যেই কিনা কে জানে, এক বর্গ সেমি ও কোঁচকান না, চোখ পাথরের কিনা ভুল হয়ে যায়। এই যে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য - অহো কল্পনা-দি। প্রথম দিকে একটু ডাবিং ঝামেলায় ঠোঁট মিলছিল না, বাকিটা তো বেশ গড়গড়। দেখে এসে অতিনাটকীয়তা বলে যাঁরা ভুরু বাঁকাচ্ছেন তাঁরা - আমি গ্র্যান্টি দিতে পারি - জিন্দেগীতে যাত্রা দ্যাখেন নি। ক্লোজআপে নাটক ও নয়। তবে বেস্ট অ্যাকট্রেস নমিনেশন ও ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড কেউ ঠেকাতে পারছে না, আগামী ফেব্রুয়ারীতে। এমনকি হামবড়া ফাজলামী সমস্ত ঠোঁটে জিভে আমূল মাখিয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি, কয়েকটি দৃশ্যে সুস্মিতা সেনের অভিনয় জাস্ট আনপ্যারালাল। জাস্ট কথা হবে না। বিশেষত: মিঠুনের সঙ্গে।



                        

                                 এবং মিঠুন 
 

"এবং" লিখে আলাদা করতে হল। আলাদা গোটা সিনেমার থেকে, সমস্ত যাত্রাগন্ধী অতিনাটকীয় ন্যাকাপনা থেকে, একটা পড়ার পদ্ধতি থেকে, মিডিওকারত্ব থেকে। কোনো শালা বেস্ট ভিলেন অ্যাওয়ার্ড এই পারফর্ম্যান্স থেকে ছিনিয়ে নেবার বুকের পাটা রাখবে এই বছর - বিশ্বাস করছি না। শীতল বিষাক্ত চোখ থেকে কামোন্মত্ত, ঘৃণার সবুজ চোখ থেকে স্তাবকতায় তুষ্ট, আত্মবিভায় মুগ্ধ থেকে অসহায়তা চাপা ষড়যন্ত্র চেষ্টা, হেরে যেতে থাকা অনুধাবন করা মরিয়া চোখ থেকে ভয়কাঁপন সৃষ্টি করা দাম্ভিক বিষ চোখ - মিঠুন আবার মনে করিয়ে দিলেন, (কি অভিমানে ! ), সিনেমা জগৎ তাঁর থেকে অনেক কিছু এখনো নিয়ে ওঠেনি। ঘেয়ো কুকুরের মতো জিভ বের করে যখন সুস্মিতাকে পিঠ-গলা-বুক-গাল বেয়ে তিনি চাটছেন, সপাটে থাপ্পর কষাচ্ছেন, পিঠ থেকে কাঁচুলির ফিতে খুলছেন চালের বস্তার মুখ খোলার সাবলীলায়, অসহায় মাথা চাপড়াচ্ছেন "ইয়ে লেড়কি সমঝতি কিঁউ নেহি!! সমঝতি কিঁউ নেহি ইয়ে লেড়কি??" চেয়ারে বসে ঘৃণা ঘৃণা আর ঘৃণা নিয়ে পা ফাঁক করে কষাটে ডাক ছুঁড়ে দিচ্ছেন - "আ: ছেনাল"; শ্মশানে শবের উপর বসে কোলে বসা বালিকা কে নগ্ন করছেন কামে বুজে যাচ্ছে স্বর; গ্রামবাসীদের খরা, মড়কের ভয় দেখাচ্ছেন, স্বপ্নের গল্প তৈরি করছেন, হাত একটু বেশি নড়ছে -নার্ভাসনেসে, কনফিডেন্স-নিশ্চিন্ত অনড় চোয়ালের হাড় নড়ে যাচ্ছে - মিঠুন পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে রইলেন গোটা সিনেমায় - বিগত বছরগুলিতে তাঁর প্রতি জন্ম নেওয়া প্রতিটি ইন্টেলেকচুয়াল বিদ্রুপের প্রতি শীতল চোখে তাকালেন আরো একবার।

No comments: