ঝরা পাতাগুলি

Thursday, October 03, 2013



বড়ো অশান্ত সময়ে আছো হে সময়


কিছু লোক আছে সব সময় তক্কে তক্কে থাকে, কার আঁকা ছবিতে কোন ধর্মের প্রতি অপমান দেখা গেল। কার লেখায় কোনো ধর্মের প্রতি কটুক্তি খুঁজে পাওয়া গেল। কোন বইতে কোন ধর্মকে গালাগালিগোছের কিছু দেওয়া আছে। কোন ইতিহাসের দলিল টানলে বিন্দু বিন্দু সন্দেহ পাওয়া যাবে, দেখা যাবে কত হাজার বছর আগে এখন যেখানে কোনো ধর্মস্থান তখন সেখানে অন্য কোনো ধর্মস্থান ছিল কিনা। কোন ঐতিহাসিকের লেখা পড়লেই বোঝা যায় যে, তাঁর দৃষ্টি ধর্মান্ধতায় ঢাকা ছিল বলে তিনি খামোকা একটি ধর্মকে চেপে দিয়েছিলেন। এরাই সিঁদুর দেখলে বলে বামফ্রন্ট। গেরুয়া রঙের বাড়ি দেখলে দেওয়ালে লিখে আসে বিজেপি। জহরকোট দেখলে থুতু দিয়ে বলে কংগ্রেস। বোম পড়লেই আল কায়দা খোঁজে। খুন দেখলেই নকশাল আর জনযুদ্ধ। সরকারী চাকুরে দেখলেই লাথি দেখিয়ে বলে ঘুষখোর। পুলিশ দেখলেই ছাদ থেকে ঢিল ছুঁড়ে বলে সাম্রাজ্যবাদের দালাল। জিনস পরা মেয়ে দেখলেই চোখ মেরে বলে রেট কত? বৌ কে জানলার ধারে দাঁড়াতে দেখলেই কুলটা বলে চুল ধরে হেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে পেটে ক্যাঁৎ করে লাথি মারে। পানের দোকানের সামনে বাচ্চা ছেলে দেখলে কান পাকড়ে সিগারেট কিনতে এসেছিস বলে ঠাস করে চড় কষায়। তারা বুঝে ফেলে সাহেবের সেক্রেটারি বা কলেজের ফার্স্ট হওয়া ছাত্রী কার কার সাথে শুতে যায়। তারা স্থির জানে কে কে খারাপ, কি কি খারাপ। এরা হাতে তুলি তুলে নিলেই বেছে বেছে অন্য ধর্মের উপাস্যদের ন্যাংটো করে এঁকে চেঁচিয়ে লোক জড়ো করে,- দ্যাখো আমি কি দারুণ এঁকেছি। ধর্ম শব্দটা দেখলেই শব্দটার আশেপাশের মানুষজনকে এরা ঝেড়ে খিস্তি করে। পারিপার্শ্বিকের যাবতীয় বিকৃতমনস্ক মানুষের গল্প সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে এরা তাদের ধর্মকে দোষী দেখায়। বই লিখলেই অন্য ধর্মকে গালাগাল দিয়ে রাখে। ইতিহাস লিখলে লিখে যায় কিছু বিকৃত তথ্য, কিছু ভুল ভাবনার খোরাক, ধর্মগতভাবে পৃথক বা একই ছিল বলেই তার কলম কারো কীর্তি উল্লেখই করে না আর কারো নামে মহানতার গল্প বানায়। এরা যে দলের হয়েই রাজনীতি করুক, ভোট বাড়াতে আর আখের গুছিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বানাতে মানুষের রক্তকে মাড়িয়ে যায় অনায়াসে। এরাই আল কায়দায় নাম লিখিয়ে আর. ডি. এক্স.-এ সেতু উড়িয়ে দেয়। নিরীহ পথচারীকে বুলেটে ঝাঁঝরা করে। এরাই জনযুদ্ধে নাম লেখায় আর গ্রামে গিয়ে ধনী চাষী খুঁজে খুঁজে খুন করে। শহরের পথে ডিউটি ফেরত কনডেন্‌ড মিল্ক হাতে কনস্টেবল খুন করে পাশে তার রক্তে লিখে আসে নকশালবাড়ী লাল সেলাম। সরকারী চাকরি পেলেই এরা টেবিলে পা তুলে ঘুমোয়, আর পাশের টেবিলে ফাইল সরানোর ফী নেওয়ার জন্যে টেবিলের উপর দিয়েই হাত বাড়িয়ে দেয়। সেই হাতে নোট তুলে দিয়ে এরাই ভাইয়ের সম্পত্তি হাতায়, বুড়ো বাপ মাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় বের করে দেয়। ট্রাফিকে চাকরি পেলে এরা লরিচালকের ছুঁড়ে দেওয়া এক টাকার কয়েন কুড়োয় রাস্তার যান চলাচল থামিয়ে। আর বনকর্মীর দিকে টাকা ছুঁড়ে দিয়ে এরাই জঙ্গলকে জঙ্গল লুপ্তপ্রায় জীবজন্তু সাফ করে চলে। হাবিলদার হলে যাদবপুরে গিয়ে নিরস্ত্র ছেলেমেয়ে তুলে উদুম লাঠি চালায়, খাদ্যমিছিলে বা জালিয়ানাবাগে বন্দুকের টিপ প্র্যাক্টিস করে, থানায় একা পেয়ে মেয়েদের কাপড় খুলে নেয়। "আর্মি জীপে মেয়েটি আছড়ায়, আর্মি জীপে বোতাম খোলা চলে।" তারপর প্রমাণ লোপ করতে যৌনাঙ্গে গুলি চলে এগারটা। চিনতে পারছেন? এরাই আবার বাড়ি থেকে শালোয়ার কামিজ পরে বেরিয়ে ফ্রি স্কুল স্ট্রীটে দাঁড়ায় লাল ব্রেসিয়ারে। শিক্ষিকার সাথে বিদেশী কাস্টমারের সামনে নগ্ন দাঁড়ায় মদের বোতল হাতে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে পথচারীদের ইঙ্গিতে আমন্ত্রণ জানায়, স্বামী কাজে বেরলে পাড়াতুতো দেওর ভাশুর বা ছেলের বন্ধুদের শোয়ার ঘরে ডাকে। আর সে শোয়ার ঘরে এরাই ঢোকে। মার গয়না, বাবার ঘড়ি চুরি করে বেচে দিয়ে এরাই স্কুলের পিছনের গেটে দাঁড়িয়ে ড্রাগস কেনে,  কিংবা ড্রাগস বেচে পকেট ভরে বেশ্যালয়ে যায়। সেক্রেটারি হলে সাহেবের অ্যান্টিরুমে, ছাত্রী হলে এরাই শিক্ষকের বিছানায় যায়। ঘরে সুস্থ সংসার রেখে এসে এরাই রাস্তায় দাঁড়ানো এদেরকেই বাইকে গাড়িতে করে নিতে আসে হোটেলে, পার্কে, সিনেমায় খুঁজে পায় অফিসে ক্লাসরুমে। চেনা যাচ্ছে? এরাই মন্দির মসজিদ গুরুদুয়ার এমনকি স্থাপত্যকীর্তি মূর্তি পর্যন্ত ভেঙে দেয়। সাহিত্য ব্যান করে আর জঅহিত্যিকের মাথা কেটে ফেলতে খোলা তলোয়ার হাতে দৌড়ে যায়, দিল্লীর রাজপথে খুন করে নাট্যকার অভিনেতাকে। জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয় পাদ্রীকে শিশুপুত্র সহ। শুধু গীর্জার ভিতরেই নয়, দলবেঁধে ভিন্নধর্মীর বাড়িতে ঢুকে নারীদের ধর্ষণ করে, শিশু এবং অনাগত শিশুদের আগুনে ঝলসায়, কুপিয়ে কুপিয়ে কাটে পুরুষের দেহ। বোরখার আড়ালে মেয়েদের চুল দেখা গেলে চাবুকপেটা করে। ডাইন সন্দেহে স্রেফ মারতে মারতে মেরে ফেলে মানুষকে। চুরির অপরাধে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে পেটায়, নখ উপড়ে নেয়, চোখে ঢুকিয়ে দেয় ডটপেনের নিব। ব্লেড দিয়ে চিরে দেয় মাংস। থেঁতলে দেয় যৌনাঙ্গ। নিজের দলে যোগ না দেওয়ার শাস্তিতে রক্তে লাল করে দেয় চাষের জমি, পুকুরের ডোবার জল। এরা সবাই সব্বাই একই লোক।

কি আশ্চর্য! এরা, এবং এদের নামও মানুষ।

বি: দ্র: - এদেরই একজন এতক্ষণ এই তুমুল ধ্যাষ্টামো লিখল আর এদেরই কেউ সেটা পড়তে পড়তে এখন  প্রাণপণে খুঁজছে কোন কোন শব্দ বা বাক্যের ভাবার্থের অনুসঙ্গে লেখককে কড়া কথায় চাট্টি গালাগালি দেওয়া যায়।

No comments: